বর্তমান বিশ্বে পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ির পরিবর্তে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্তমান সময়ে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর মূল্য তুলনামূলক বেশি। যার ফলে এই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো বেশ অনেকটা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরেই রয়েছে। আর তাই বৈদ্যুতিক গাড়িকে মধ্যবিত্তদের নাগালে আনতে চীনা অটোমোবাইল কোম্পানি বিওয়াইডি বাজারে আনতে চলেছে তাদের সাশ্রয়ী মূল্যের ইলেকট্রিক গাড়ি। সাশ্রয়ী মূল্যের নতুন এই ইলেকট্রিক গাড়িটির নাম রাখা হয়েছে "ইভি সিগাল"।
ইভি সিগালইভি সিগাল হলো একটি চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি। বর্তমান বিশ্বে ক্রমাগতই তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে অনেকেই তেলে চালিত গাড়ির তুলনায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ইলেকট্রিক গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়ায় এই আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সময়ে ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর এই বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখেই চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি নিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতে তাদের "সিগাল" মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িটি বাজারে লঞ্চ করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে এসে তারা তাদের এই সিগাল সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ হিসেবে নতুন 'ইভি সিগাল' মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িটি লঞ্চ করেছে। ইভি সিগালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অন্যান্য ইলেকট্রিক গাড়ির তুলনায় আকারে বেশ ছোট এবং অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের। যার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ইভি সিগালের কিছু বিশেষ ফিচারের কারণে বর্তমান সময়ে এটি বহির বিশ্বে বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইভি সিগালের অন্যতম ফিচার হলো এর ছোট এবং স্লিম ডিজাইনের বডি স্ট্রাকচার। আকারে বেশ ছোট হওয়ায় শহরের সরু রাস্তা কিংবা গলি দিয়ে খুব সহজেই চলাচল করতে পারবে গাড়িটি। তবে আকারে ছোট হলেও উচ্চ মাইলেজ দেওয়া হয়েছে ইভি সিগাল নামক এই ইলেকট্রিক গাড়িটিতে।
গাড়িটি এক চার্জে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। বর্তমানে গাড়িটি এক চার্জে প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। এর পাশাপাশি গাড়িটিতে সর্বোচ্চ ৮১ মাইল প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বেগ পাওয়া সম্ভব। গাড়িটিতে আরো রয়েছে অত্যাধুনিক নানা সুযোগ সুবিধা সমূহ। বিশেষ করে অত্যাধুনিক জিপিএস, ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি এবং টাচস্ক্রিন ড্যাশবোর্ডসহ অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তি সমূহকে যুক্ত করা হয়েছে ইভি সিগাল মডেলের নতুন এই ইলেকট্রিক গাড়িটিতে।
শুরুতেই বলে নেওয়া হয়েছে যে, ইভি সিগাল হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর মাঝে অন্যতম। বর্তমানে ইভি সিগালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০,০০০ ডলার। অপরদিকে যদি আপনি টেসলার ইলেকট্রিক গাড়িগুলো কিনতে চান তবে আপনাকে গুনতে হবে অন্তত ৩১,৪৯০ থেকে ৬৪,৪৯০ ডলার। অর্থাৎ বাজারে থাকা অন্যান্য জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর তুলনায় ইভি সিগালের মূল্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
আরও পড়ুন : সোলশেয়ার কি?
আর তাই সাশ্রয়ী মূল্যের এই গাড়িটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ইলেকট্রিক গাড়ির মার্কেটে। যদিও টেসলা বা অন্যান্য জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর তুলনায় কিছু ফিচারের ঘাটতি রয়েছে ইভি সিগালে। তবুও মূল্য তুলনামূল বেশ কম হওয়ার কারণে এবং গাড়িটিতে কিছু আধুনিক ফিচার যুক্ত করার কারণে, অনেক ইলেকট্রিক গাড়ি প্রেমীদের মনেই জায়গা করে নিয়েছে ইভি সিগাল। ভবিষ্যতে হয়তো ইভি সিগালের আরও অত্যাধুনিক সংস্করণ নিয়ে বাজারে আসবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি।
বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুতের সিস্টেম উন্নত হচ্ছে। আর তাই ইভি সিগালের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের এখনই উপযুক্ত সময়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, স্বল্প মূল্যের পরিবেশবান্ধব এই ইলেকট্রিক গাড়িটিকে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারি।
Post a Comment