উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকল হলো এমন একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্র যা বাতাসের গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। উইন্ড টারবাইন মূলত বিভিন্ন সময়ে বায়ুর গতির পরিবর্তন এবং বায়ুর চাপের পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। আর তাই নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকল বর্তমান বিশ্বে বহুল জনপ্রিয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বায়ুকলকে ব্যবহার করে সরাসরি পানি উত্তোলন করা যায়, এছাড়াও কাঠ এবং পাথরের মত বস্তুও কাটা যায়। বর্তমান সময়ে এর পাশাপাশি আরো নানাবিধ কাজে এই বায়ুকলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটিকে ধ্বংস করতে নাসার সাথে চুক্তি ইলন মাস্কেরবায়ুকলের প্রধান যন্ত্রাংশ সমূহ
১.ব্লেড : একটি উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকলের দিকে তাকালে আমরা যে বিশাল পাখা আকৃতির বৃহদাকার বস্তুটিকে দেখতে পাই সেটিই মূলত ব্লেড। যখন বাতাসের প্রবাহ শুরু হয় তখন বাতাসের সংঘর্ষের ফলে এই ব্লেডটি ঘুরতে শুরু করে, যা মূলত এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দায়ী। বায়ুকলের বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে এবং প্রকারভেদে বায়ুকলের ব্লেডয়ের মাঝেও ভিন্নতা রয়েছে।
২.রটার : একটি বায়ুকলের ব্লেড এবং হাব মিলে রটার নামক অংশটি গঠন করে। রটার মূলত বাতাসের গতিশক্তিকে সংগ্রহ করে থাকে। বায়ুকলে ব্যবহৃত জেনারেটরটিকে চালাতে এই রটারের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।
৩.জেনারেটর : এই জেনারেটর হলো বায়ুকলের মূল যন্ত্রাংশগুলোর মাঝে অন্যতম। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়া এই জেনারেটরেই সংঘটিত হয়। রটার থেকে প্রাপ্ত বায়ুর গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই জেনারেটরটি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে।
৪.নাকেল : রটার এবং জেনারেটরসহ বায়ুকলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশকে বাইরের সকল প্রকার আঘাত থেকে রক্ষা করে এই নাকেল।
৫.টাওয়ার : ব্লেডসহ জেনারেটরকে যে উঁচু স্থানে স্থাপন করা হয় সেটিই মূলত টাওয়ার। যে সকল স্থানে বাতাসের গতিবেগ অধিক থাকে মূলত সেই সকল স্থানেই টাওয়ার স্থাপন করা হয়। যেহেতু সমুদ্র উপকূলে প্রায় সবসময়ই বাতাসের প্রবাহ অন্যান্য স্থানের তুলনায় অধিক থাকে, তাই বিশ্বের অধিকাংশ দেশই সমুদ্র উপকূলে তাদের টাওয়ার তথা বায়ুকলগুলোকে স্থাপন করে থাকে।
বায়ুকল যেভাবে কাজ করে
বাতাস যখন প্রবলবেগে বায়ুকলের ব্লেডের উপর আছড়ে পড়ে, ঠিক তখনই বাতাসের আঘাতে ব্লেডগুলো ঘুরতে শুরু করে। ব্লেডের ঘূর্ণন বায়ুকলের রটারয়ের সাহায্যে গিয়ে পৌঁছায় জেনারেটরে। তারপর মূলত এই জেনারেটরই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ তারের সাহায্যে বিভিন্ন গ্রিডে পাঠানো হয় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরকারের জন্য।
উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি দূরবর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ, জাহাজ এবং নৌকায় শক্তি সরবরাহ এবং বাতাসের গতিবেগও নির্ণয় করা হয়ে থাকে। বায়ুকল যেহেতু একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎস এবং একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, তাই বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই বায়ুকলের সাহায্যে প্রতিনিয়তই তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
যদিও বায়ুকলের সহায়তায় অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অনেকটাই কঠিন। তবুও আশা করা যায় যে, প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্রমধারায় ভবিষ্যতে হয়তো এই বায়ুকলের সাহায্যে বর্তমানেট তুলনায় আরো কয়েকগুণ অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
Post a Comment