বিগত কয়েক বছর ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর সাহায্যে খুব সহজেই অত্যন্ত জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। যেকোনো ধরনের জটিল সমস্যা যেগুলো সাধারণ প্রচলিত কম্পিউটারের জন্য সমাধান করা তুলনামূলক কঠিন, সেগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুব সহজেই করে ফেলছে। আর তাই সাধারণ প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে উজ্জল ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনা।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি ?কোয়ান্টাম কম্পিউটার হচ্ছে বর্তমান সময়ের সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় কয়েক হাজার গুন শক্তিশালী কম্পিউটার। মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর ভিত্তি করে তৈরিকৃত এই অত্যাধুনিক কম্পিউটারটি কয়েক মুহূর্তেই সকল ধরনের জটিল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। আর যেহেতু কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর ভিত্তি করে এই কম্পিউটারটি তৈরি করা হয়েছে তাই অন্যান্য সাধারণ কম্পিউটারের সাথে এর গঠনগত ভিন্নতা রয়েছে, এমনকি এই কম্পিউটারটির এলগরিদমটিও অন্যান্য সাধারণ কম্পিউটারের এলগরিদম থেকে একেবারেই ভিন্ন।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যেভাবে কাজ করে
বর্তমান সময়ে প্রচলিত কম্পিউটার গুলো মূলত শুন্য এবং এক এর এলগরিদম অর্থাৎ বাইনারি এলগরিদম মেনে চলে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যেহেতু কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার কুবিট ব্যবহার করে থাকে। কুবিট একই সাথে শূন্য এবং এক হতে পারে, যা প্রচলিত বিটের তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে আরো কয়েকগুণ শক্তিশালী করে তোলে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে এক অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর ব্যবহারের ফলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। উদাহরণস্বরূপ :
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে এক অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর ব্যবহারের ফলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। উদাহরণস্বরূপ :
আরও পড়ুন : সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি পূর্বের তুলনায় অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অগ্রগতিকে আরেকটি নতুন রূপ প্রদান করতে সক্ষম এই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর সাহায্যে মেশিন লার্নিং এলগরিদম শক্তিশালী এবং দক্ষ হয়ে উঠবে যা, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে পূর্বের তুলনায় আরো উন্নত করে তুলবে।
ড্রাগ ডিজাইন : কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অত্যন্ত জটিল কিছু রাসায়নিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মডেল তৈরি করতে সক্ষম। উক্ত মডেলগুলোর উপর ভিত্তি করে আরো উন্নত এবং নতুন ঔষধ তৈরি করে বাজারজাত করা সম্ভব।
আর্থিক মডেলিং : কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভবিষ্যতের যেকোনো অর্থনৈতিক রিপোর্ট এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি কেন্দ্রিক পূর্বাভাস খুব সহজেই পাওয়া যাবে। যা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তিটি মানব সভ্যতার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করলেও উক্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে ত্রুটিমুক্ত রাখাও ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে অত্যাধুনিক এই যন্ত্রটিকে সকল যান্ত্রিক ত্রুটি হতে মুক্ত রাখা এবং এলগরিদম হিসেবে ব্যবহার করা কুবিটকে স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে উক্ত সমস্যাগুলোকে অদূর ভবিষ্যতে খুব সহজেই সমাধান করে ফেলা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে মানব সভ্যতার জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একটি আশীর্বাদস্বরূপ এবং ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার জীবনমান পরিবর্তনেও এটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
Post a Comment