কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ১৯৭ জন নিহত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্টি হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯৭ জন নিহত এবং কয়েক শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জুলাই সারাদেশব্যাপী নিহত হন অন্তত ৫ জন। পরবর্তী ১৮ জুলাই দেশব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৪ জন। নিহতদের মাঝে কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং  সাভার, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর ও নরসিংদীতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন।

ঢাকায় নিহত ৯ জন

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজ (১৮ জুলাই)  সকাল থেকেই রাজধানীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমেই রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। তবে এরপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানো শুরু করে পুলিশ সদস্যরা। এতে পথচারীসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ফারহান ফাইয়াজ (১৭) নামক এক কিশোর। তিনি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে একজন শিক্ষার্থী। দুপুরে রাজধানীর সিটি হাসপাতাল নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কিশোর ফারহান ফাইয়াজের পরিবারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, ছেলের এমন মৃত্যুর বিচার দাবি করে পোস্ট করেছেন নিহতের মা।

আরও পড়ুন : দেশব্যাপী পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে ৮ জন গুলিবিদ্ধ

অপরদিকে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা এবং আজমপুরে চলমান সংঘর্ষে অজ্ঞাত পরিচয়ের মোট ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মাঝে ৪ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিকটস্থ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উক্ত ৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। নিহতদের মাঝে একজনের মরদেহ ইতোমধ্যেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আবার ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলমান সংঘর্ষে ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজের এক শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছে ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ। যদিও এখনও উক্ত শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে রাজধানীর শনির আখড়ায় অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন এবং হানিফ ফ্লাইওভার এলাকায় মেহেদী নামক একজন সংবাদকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।



দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নিহত ৫ জন

সাভারে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের নিক্ষেপ করা রাবার বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছেন ইয়ামিন নামক একজন শিক্ষার্থী। অপরদিকে নরসিংদীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পুলিশ-বিজিবির  সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ইমন এবং তাহমিদ তামিম নামক দুই কিশোর। তাহমিদ তামিম নরসিংদী এন কে এম হোমস এন্ড স্কুলের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নরসিংদী সদরের চিনিশপুর উপজেলায়। মাদারীপুর শহর এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দিপ্ত দে (২২) নামক একজন কলেজ শিক্ষার্থী এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন নিহত হয়েছেন।


আরও পড়ুন : ঢাবি সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

অপরদিকে ১৯ জুলাই সকাল থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে সারাদেশব্যপী অন্তত ২৭ জন নিহতের এবং কয়েকশতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়, বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার চিকিৎসাধীন অবস্থায় (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) মৃত্যুর মাধ্যমে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশব্যপী এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৯৭ জনে।

সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সর্বশেষে সারাদেশব্যপী কারফিউ জারি করেছে সরকার। কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৫ শতাংশ এবং কোটার ভিত্তিতে ৫ শতাংশ নিয়োগের। উচ্চ আদালত শিক্ষার্থীদের উক্ত দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সরাকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ এবং কোটার ভিত্তিতে ৭ শতাংশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে, সকল প্রকার আন্দোলন স্থগিত করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post