দেশ সেরা কিছু শিশু কিশোর সংগঠন সমূহ

বাংলাদেশের শিশু ও কিশোরদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছে। তার মাঝে বেশ কিছু শিশু কিশোর সংগঠন দেশের নানা অঙ্গনে শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এবং বর্তমানেও তার ধারাবাহিকতা রেখে যাচ্ছেন।


খেলাঘর আসর

বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন গুলোর মাঝে খেলাঘর আসর অন্যতম। " লাল সবুজের বাংলাদেশে, শিশুর জীবন উঠুক হেসে" এই নীতিবাক্যকে সামনে রেখে ১৯৫২ সালের ২ মে রাজধানী ঢাকায় সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর। তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক হাবীবুর রহমানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান লাভ করে খেলাঘর আসর। 

প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই দেশের শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের কথা মাথায় রেখে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে সংগঠনটি। ফলশ্রুতিতে বিপুল জনপ্রিয়তাও অর্জন করে এই জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠনটি। আজ থেকে প্রায় ৭২ বছর আগে তৈরি হওয়া এই সংগঠনটি এখনো শিশু-কিশোরদের বিকাশে রেখে চলেছে তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর।




কচি-কাঁচার মেলা

১৯৫৬ সালের ৫ অক্টোবর, রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশের আরেকটি কিংবদন্তি শিশু কিশোর সংগঠন কচি-কাঁচার আসর। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল,ডক্টর কুদরত-ই খুদা,কবি জসীম উদ্দিন সহ আরো দেশখ্যাত সাহিত্যিকগণ।

খুব শীঘ্রই জনপ্রিয় এ শিশু কিশোর সংগঠনটি তাদের প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে যে শিশু কিশোর সংগঠনগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছিল তাদের মাঝে কচি-কাঁচার মেলা অন্যতম। বর্তমান সময়েও এই সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে যা সকলের কাছেই বেশ প্রশংসনীয়।


প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিরলসভাবে নিজেদের সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এমন একটি জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠনের নাম ফুলকুঁড়ি আসর। ১৯৭৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর " পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজেকে গড়ো " এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতীয় শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি শিশু-কিশোরদের বিকাশে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে যাচ্ছে। 
এর মাঝে শিশুদের জন্য শিক্ষাসেবা,স্বাস্থ্যসেবা এবং বৃত্তিসেবা অন্যতম। মূলত একতা,শিক্ষা, চরিত্র,স্বাস্থ্য এবং সেবা এই পাঁচটি আদর্শকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে ফুলকুঁড়ি আসর। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ফুলকুঁড়ি আসরের রয়েছে সেবা ব্যাংক নামক এক বিশেষ প্রকল্প যা বর্তমান সময়ে সকলের নিকট বহুল প্রশংসিত হচ্ছে। সেবা ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত অর্থ মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্য এবং বৃত্তি সেবার পেছনে ব্যায়িত হয়ে থাকে। 

এর পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময় ক্যাম্প, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন, ঘুড়ি উৎসব, বনভোজন, শিক্ষা ভ্রমণ, সাহিত্য সভা, পিঠা উৎসব সহ নানান আয়োজনে শিশুদের নিয়ে মুখরিত হয়ে থাকে ফুলকুঁড়ি আসরের দেশব্যাপী বিস্তৃত শাখাগুলো। ফুলকুঁড়ি আসরের নানা কার্যক্রমগুলোর মাঝে "মাসিক ফুলকুঁড়ি" অন্যতম। নিয়মিত প্রকাশনায় প্রায় ৪৬ বছর ধরে শিশু কিশোরদের মাঝে বহুল জনপ্রিয় একটি শিশু কিশোর পত্রিকার নাম "মাসিক ফুলকুঁড়ি"। 


খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করতে যাচ্ছে শিশু কিশোরদের প্রাণপ্রিয় এ সংগঠনটি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বাংলাদেশে প্রায় কয়েক হাজার শিশু-কিশোর সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও তাদের অধিকাংশই আজ নিষ্ক্রিয়, তবে এরই মাঝে নিয়মিত নিজেদের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে এই শিশু কিশোর সংগঠনটি। 

চাঁদের হাট 

রফিকুল হক দাদু ভাই এর উদ্যোগে ১৯৭৪ সালের ঢাকায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে চাঁদের হাট। বাংলাদেশের জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন গুলোর মাঝে চাঁদের হাট অন্যতম। "আমরা সুন্দর হবো" এই মূলমন্ত্রকে সামনে নিয়ে ১৯৭৪ সালের ১৪ ই এপ্রিল যাত্রা শুরু করে এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিজেদের কর্মসূচির মাধ্যমে বহুল প্রশংসিত হয়ে আসছিল এ সংগঠনটি এবং খুব অল্প সময়ের মাঝেই সমগ্র দেশব্যাপী শাখা বিস্তার করতে থাকে সংগঠনটি। 

মূলত নতুন প্রজন্মকে আলোর পথে আনতেই কাজ শুরু করে এ অনন্য সংগঠনটি। এর পাশাপাশি শিশুদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে চাঁদের হাট। বিশেষ করে ছড়াসাহিত্যের জাদুকর নামে খ্যাত রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন চাঁদের হাটের অন্যতম আকর্ষণ।


মুকুল ফৌজ 

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং জনাব মোঃ মোদাব্বেরের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে মুকুল ফৌজ। শুরুতে শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি করা এই সংগঠনটির নাম ছিল মুকুলের মাহফিল এবং পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে মুকুল মেলা নামকরণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে এসে পুনরায় মুকুল মেলার নাম পরিবর্তন করে বর্তমান সময়ের মুকুল ফৌজ নামটি রাখা হয়। 

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল শিশু-কিশোরদের স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ নিশ্চিত করা। এক সময় দেশজুড়ে প্রায় কয়েক শতাধিক শাখা থাকলেও বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে মুকুল ফৌজের প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টি শাখা রয়েছে। মুকুল ফৌজ কর্তৃক তৈরিকৃত মুকুল ফৌজ পাঠাগার বর্তমান সময়ে বহুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আর তাই এখনও শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক বিকাশে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মুকুল ফৌজ। 

Post a Comment

Previous Post Next Post